এখনো স্মার্টফোনের দুনিয়ায় আইফোন বেশ দামি ফোন। কিন্তু সহজে এর দাম কমায় না আইফোন নির্মাতা অ্যাপল। এর দাম কমার কোনো সম্ভাবনা কি আছে? প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ধীরে ধীরে আইফোনের বিক্রি কমছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। পাশাপাশি নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে অ্যাপল। এ বছর নতুন চমক হিসেবে আইফোন ৮ আসতে পারে। সব মিলিয়ে অ্যাপল কি আইফোনের দাম কমানোর কথা ভাববে? ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারে আইফোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক অ্যাপলের পরিকল্পনা সম্পর্কে:
বিশ্বের সবচেয়ে সফল পণ্যগুলোর একটি আইফোন। এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি ইউনিটের বেশি আইফোন বিক্রি হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে উঠে এসেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। তবে আইফোনের যুগও বুঝি শেষ হতে চলেছে! নতুন প্রযুক্তিপণ্য এসে আইফোনের জায়গা নিতে পারে যেকোনো সময়। অ্যাপলকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে বড় ধরনের এক চ্যালেঞ্জের। এর আগে আইফোনের কারণে একই দশা হয়েছিল জনপ্রিয় পণ্য আইপডের। তা-ও মাত্র এক দশক আগে। এবার আইফোনের ক্ষেত্রেও সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেদের চোখে স্মার্টফোন বর্তমানে প্রভাবশালী একটি কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু স্মার্টফোন আর কত দিন? মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক ও অ্যাপল নতুন প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। নতুন এ রকম একটি প্রযুক্তির নাম অগমেন্টেড রিয়্যালিটি। কম্পিউটার গ্রাফিকসকে বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রযুক্তি অগমেন্টেড রিয়্যালিটি বা এআর। আলো আর সহজে বহনযোগ্য স্মার্ট গ্লাসের সমন্বয়ে তৈরি এআর প্রযুক্তি বর্তমান যুগের সব ধরনের স্ক্রিন বা পর্দার বিকল্প হয়ে উঠবে। এমনকি আইফোনও হারাবে জনপ্রিয়তা। মানুষ ছুটবে নতুন প্রযুক্তির পেছনে।
অ্যাপলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্তমান বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও স্মার্টফোন বিক্রির যে প্রবৃদ্ধি ছিল, সে হার এখন কমে গেছে। এখন স্মার্টফোন মানুষ কম কিনছে। তাই স্মার্টফোনের বিকল্প ভাবার সময় এসে গেছে।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক অগমেন্টেড রিয়্যালিটি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি এ প্রযুক্তি নিয়ে রোমাঞ্চিত। সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের উৎসাহের কথা বলেন কুক।’
অবশ্য এর আগে এআর প্রযুক্তি নিয়ে বড় ধরনের পণ্য বাজারে আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্মকর্তা।
গত বছর টিম কুক বলেছিলেন, ‘এরআর আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে কারণ, এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কিছু বাধা এখনো রয়ে গেছে। তবে এটা আসবে, বড় আকারেই আসবে। এটা আসলে আমরা আশ্চর্য হয়ে বলব, এটা ছাড়া থাকতে পারব না। ঠিক এখন আমরা মোবাইল ফোন নিয়ে যা বলি।’
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, গোপনে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে অ্যাপল। অবশ্য গ্লাসনির্ভর ওই প্রকল্প সম্পর্কে কখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি অ্যাপল কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকেরই ধারণা, ডিজিটাল গ্লাস পণ্য তৈরিতে কাজ করছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাপল ভবিষ্যৎ পণ্য সম্পর্কে মুখ না খুললেও দুটি বিষয় এর ইঙ্গিত দেয়। এর একটি হচ্ছে প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ ও আরেকটি হচ্ছে নতুন সফটওয়্যার উন্মুক্তকরণ। সম্প্রতি এআরকিট নামের একটি সফটওয়্যার ছেড়েছে অ্যাপল, যা আইফোনের জন্য এআর অ্যাপ তৈরিতে সুবিধা দেয়।
ইতিমধ্যে এর ফল পেতে শুরু করেছে অ্যাপল। তবে অ্যাপলের পক্ষ থেকে নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া হয়নি। এর অর্থ, ডেভেলপাররা আইফোনের জন্য অনেক এআর অ্যাপ তৈরি করবেন। পরে অ্যাপল গ্লাস বাজারে ছাড়া হলে তাতে অনেক বেশি অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
অ্যাপলের সম্ভাব্য পণ্য অ্যাপল গ্লাসেস
২০১৫ সালে জার্মানির অগমেন্টেড রিয়্যালিটি কোম্পানি মেটাইওকে কেনার পর থেকে এআর খাতটি নিয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে অ্যাপল। মেটাইও টেকনোলজিসহ অ্যাপলের বেশ কিছু কর্মকর্তা মিলে গোপন প্রকল্প নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে অ্যাপল এআর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে এ রকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি জার্মানির আরেক প্রতিষ্ঠান সেসনোমটোরিককে কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নতুন নতুন আরও এআর প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণের জন্য খুঁজছে অ্যাপল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অ্যাপল।
অ্যাপল অনেক সময় নিজের পণ্যকে কোণঠাসা করে রাখে। আইফোনের ক্ষেত্রেও অ্যাপল সে রকম চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। কারণ, ২০০৫ সালে আইপডের ক্ষেত্রেও তাই করেছিল অ্যাপল।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বড় ধরনের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। এর ফলে আইফোনের ওপর বড় প্রভাব পড়বে, যা আইপডের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী।
এ প্রত্যাশা ইতিমধ্যে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেদের কাছ থেকে আসা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান লুপ ভেঞ্চার্সের অ্যাপল বিশ্লেষক জিন মুনস্টার বলেন, তাঁর নিজস্ব মডেলে দেখেছেন আইফোন বিক্রির হার পরের দশকে কমতে থাকবে। ‘অ্যাপল গ্লাসেস’ নামের ওই পণ্যের কারণে আইফোন বিক্রি ধীরে ধীরে কমবে। ২০২০ সাল নাগাদ ১ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার দামের ওই পণ্য বাজারে আসতে পারে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত স্মার্টফোন বাজার প্রবৃদ্ধির হার মাত্র তিন শতাংশ। গত এক দশকে অ্যাপল যে বিশাল ঢেউয়ের ওপর ছিল তার চূড়ায় পৌঁছে গেছে, এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পালা।
কিন্তু দ্রুতবর্ধনশীল প্রযুক্তি সম্ভাবনা দেখাচ্ছে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি ও ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি হেডসেট।
এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী বড় চমক ঘোষণার আগে আইফোনের দাম কমানোর কোনো আগ্রহ আছে কি না।
No comments